

শনিবার ● ৬ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » ফনিক্স ফাইন্যান্সের ঋণ অনিয়ম: ব্যবস্থা গ্রহণে টালবাহানা
ফনিক্স ফাইন্যান্সের ঋণ অনিয়ম: ব্যবস্থা গ্রহণে টালবাহানা
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাক্রমে ফনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের এমডি এস এম ইন্তেখাব আলমকে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ১ দিন আগে বরখাস্ত করা হয়। নির্দেশনায় ইন্তেখাব আলমের স্থলাভিষিক্ত হন ডিএমডি মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান।
এদিকে, ঋণ অনিয়ম ও আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এমডিকে বরখাস্ত করা হলেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বহাল তবিয়তে আছেন ডিএমডি। এরপর, ২৩ জানুয়ারি ঋণ অনিয়মের সাথে কারা জড়িত তা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দেয় (স্মারক নং ডিএফআইএমসি/১০৫৪/৫৫২০২৪-২৮৯) ফনিক্স ফাইন্যান্সকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ফনিক্স ফাইন্যান্সের ডিএমডি এবং প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের প্রধান শিরিণ আখতারকে শোকজ করে ফনিক্স ফাইন্যান্স। ডিএমডি শিরিণ আখতারকে শোকজ লেটার দিতে প্রতিষ্ঠানটি সময় নেয় প্রায় ১ মাস। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক ২৩ জানুয়ারি চিঠি দিলেও ফনিক্স ফাইন্যান্স ডিএমডির বিরুদ্ধে শোকজ লেটার ইস্যু করে ১৮ ফেব্রুয়ারি (স্মারক নং PFIL/HQ/HRD/2024/0335)।
ঋণ অনিয়ম এবং অনিয়মের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফনিক্স ফাইন্যান্সের কোম্পানি সেক্রেটারি সাব্বিরুল হক চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে স্টেপ বাই স্টেপ অবহিত করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে রিপোর্টিং করার জন্য যে প্রক্রিয়া সেটি এখনো চলমান। এখানে প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি বিশেষের সম্পর্কে কোনো ফাইন্ডিংন্স নাই, ঋণ অনিয়মের যোগসাজশের কোনো ব্যাপার এখানে নেই।
ঋণ অনিয়ম ও ওই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শোকজ লেটার সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমডি এবং প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের প্রধান শিরিণ আখতার বিবার্তাকে বলেন, আমাদের এখানে যেসমস্ত ফাইল আছে সেখানে কোনো অনিয়ম সেভাবে নাই। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের পার্টিকুলারলি বলে নাই, তারা কী ফাইন্ডিংস পেয়েছে। আমাদের ইন্টার্নাল কম্পায়েন্সকে বলেছে, এখানে কী অনিয়ম দেখতে। কিছু কিছু অনিয়ম হয়তো কোনো চিঠিতে ডেট দেওয়া নাই এরকম কিছু আছে। আমার ব্রাঞ্চে যেগুলো ছিল, সেগুলোতে সেধরনের কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি, যেটার জন্য আমাদের শোকজ করতে হবে। কিছু ডকুমেন্টারি ল্যাপ্সেস থাকতে পারে, এটা ডিফাইন্ড ইস্যু, কিন্তু অনিয়ম বলতে কিছু এখানে নেই। ঋণ অনিয়ম বলতে যা বোঝায় সেরকম আমাদের প্রতিষ্ঠানে হয় নাই। এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। এখানে কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়নি।
ঋণ অনিয়মের বিরুদ্ধে ফনিক্স ফাইন্যান্স এখনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চেয়ে ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ নীতি ও নিয়ন্ত্রণ শাখার যুগ্ম পরিচালক মুনমুন আহমেদকে বিবার্তার প্রতিবেদক কল দিলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে অসম্মতি জানান। মুনমুন আহমেদ বলেন, এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেসবাউল হক সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৮ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকে এ সংক্রান্ত পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
এদিকে ফনিক্স ফাইন্যান্স ঋণ অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি, ইন্তেখাব আলমের স্থলাভিষিক্ত ডিএমডি মোহাম্মদ সাইদুজ্জামানকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি বিবার্তার প্রতিবেদকের কল রিসিভ করেননি।
চলতি বছরের ২৫ মার্চ (সোমবার) বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ/নিযুক্তি এবং তার দায়দায়িত্ব সম্পর্কে নীতিমালা উল্লেখ করে একটি সার্কুলার জারি করেছে। যেখানে বলা হয়, কোনো ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বকালে কোনো কর্মকর্তা আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকলে– তাকে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেব নিয়োগ ও পুনঃনিয়োগ করা যাবে না। এছাড়া কোনো কর্মকর্তা যদি খেলাপি গ্রাহক হন, কর খেলাপি হন অথবা পাওনাদারের অর্থ পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছেন কিংবা আদালত থেকে কোন সময়ে দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছেন– এমনটা থাকলেও সেই কর্মকর্তা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, ফনিক্স ফাইন্যান্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। ১৬৬ কোটি টাকা পেইড আপ ক্যাপিটেলের এই প্রতিষ্ঠানে ১৬ কোটি ৫৯ লাখ শেয়ার রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত, পরিচালকদের শেয়ার রয়েছে ২৯.১৭ শতাংশ, ইনস্টিটিউটের হোল্ডিং রয়েছে ২৩.০৫ শতাংশ এবং পাবলিক শেয়ার রয়েছে ৪৭.৭৪ শতাংশ।
২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত ফনিক্স ফাইন্যান্স এর অথোরাইজড ক্যাপিটাল ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে লং টার্ম লোন ৪১৮.৩ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে ২২ কোটি ৩ লাখ টাকার নেগেটিভ ব্যালেন্স রয়েছে।
২০১৯ সালের পর প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি। ২০১৯ সালে ৬ শতাংশ, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ সালে প্রতিবছর ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে তারা। তবে ২০১৮ সালেও কোনও ডিভিডেন্ড দেয়নি।
বিষয়: #অনিয়ম #ঋণ #ফনিক্স #ফাইন্যান্স