শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

Somoy Channel
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » রহস্যময়ী নারী
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » রহস্যময়ী নারী
৬৯ বার পঠিত
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

রহস্যময়ী নারী

রহস্যময়ী নারী‘তুমি যদি আমার মেয়েকে বিয়ে করো,তাহলে আমি তোমার বাবার সমস্ত ঋন পরিশোধ করার ব্যবস্থা করো দিবো’।
অপরিচিত একজন মানুষের কাছে থেকে এমন কথা শোনার পর যে কেউই অবাক হবে।হৃদয়ও বেশ অবাক হয়েছে প্রায় পঞ্চাশোর্ধ বয়সী লোকটির কথা শুনে।
হৃদয়ের বাবা মারা গেছে গত দুদিন আগে।মারা যাবার আগে তিনি মানুষের কাছে থেকে চড়া সুদে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছেন ব্যবসার খ্যাতিরে।
কিন্তু হৃদয়ের বাবা হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার কারনে সমস্ত ঋণের চাপ এসে পড়েছে হৃদয়ের ওপর।ঋণের পরিমাণ সর্বোমোট বারো লক্ষ টাকা।বর্তমানে এই পরিমাণ টাকা হৃদয়ের পক্ষে শোধ করা সম্ভব না।কেননা হৃদয় সবে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির চেষ্টা করছে।হৃদয় কখনো ওর বাবার ব্যবসার ব্যাপারে নাক গলায় নি।হৃদয় সব সময় চেয়েছে সে চাকরি করবে।কারন ওর কাছে ব্যবসার চেয়ে চাকরি বেশি সুবিধাজনক মনে হয়েছে।কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা পরিচিত লোক আর ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া সম্ভব না।ভাগ্যের জোরে দুই-একজন নিজ যোগ্যতা দ্বারা চাকরি পেয়ে যায়।
একদিকে হৃদয় কোনো চাকরি জোগার করতে পারছিলো না আরেকদিকে পাওনাদাররা এসে চাপ দিতে শুরু করেছে।প্রতিটা মানুষ এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ আগেই একজন পাওনাদার এসে কড়া কিছু কথা বলে সাত দিনের সময় দিয়ে চলে গেলো।সাত দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে যা হয় একটা করবেন উনি।
এমন পরিস্থিতিতে হৃদয় কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না।মনে মনে ভাবছিলো,সে কি রাতের আঁধারে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাবে।পরক্ষণেই মনে হচ্ছিলো,”না না এটা করা মোটেও ঠিক হবেনা।সন্তান হিসেবে তো আমার একটা দায়িত্ব আছে।সে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া ঠিক হবেনা”।
হৃদয় বাড়ির উঠানে বসে থেকে এসব চিন্তা করছিলো ঠিক সে সময় লোকটি হৃদয়ের সামনে এসে কথাটি বললো।হৃদয় বেশ অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে।হৃদয়’কে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
->কি হলো এমন অবাক হয়ে কি দেখছো?
->দেখছি একজন অপরিচিত মানুষ,চেনা নেই জানা নেই হুট করে একজনের কাছে এসে এমন প্রস্তাব রাখলো।এটা কি অবাক হওয়ার বিষয় নয়?
->হুম তা তো অবশ্যই।তবে তুমি আমায় না চিনলেও আমি তোমায় খুব ভালো করে চিনি।
->ও।কিন্তু আপনি আসলে কে?আর সব খুঁজে খুঁজে আমার কাছেই বা আসলেন কেন?
->তো বেশ আমার ব্যাপারে বলি তাহলে,,,?
হৃদয় কিছু বললোনা।লোকটি বলল,
->আমি তোমাদের এলাকার একসময়কার জমিদার আকবর হোসেনে একমাত্র নাতি আরিফুল হোসেন।আমি অনেক ছোট থাকতে আমার বাবা সবাই’কে নিয়ে শহরে চলে গিয়েছিলো।আর সেই থেকে আমার শহরে বেড়ে উঠা।মাঝেমাঝে গ্রামে আসা হয়।আজ কয়েকদিন হলো গ্রামে ঘুরতে এসেছি।আর গ্রামে এসে তোমাদের ব্যাপারে জানতে পারলাম।
->ও আচ্ছা।তো দেশে এত ছেলে থাকতে শেষে কি না আমার মত একজন সামান্য ছেলেকে খুজে পেলেন নিজের মেয়ের বিয়ের জন্য।আমার ব্যাপারে তো সবই জানেন,আমার কাছে বর্তমানে একটা সার্টিফিকেট ছাড়া আর কিছুই নেই।বর্তমান যে ভিটাটা আছে এটাও যেকোনো সময় মানুষের দখলে যেতে পারে।
->হুম জানি।তারপরও তোমার বাবার কাছে থেকে অনেক লোক পাওনা থেকে যাবে।তাই তো আমি তোমায় এই প্রস্তাব দিলাম।
->আচ্ছা আপনার তো টাকা-পয়সার অভাব নেই,আপনি চাইলে তো যেকোনো কোটিপতির ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিতে পারেন।সেখানে আমার মত একজন সহায়-সম্পদহীন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন ব্যাপারটা আসলেই ভাবার মতো।কোথাও আবার আপনার মেয়ের চরিত্রের কোনো সমস্যা নেই তো যার কারনে কেউ বিয়ে করতে চাইছে না বলে,মেয়েকে আমার ঘাড়ে গোছাতে চাইছেন?
এবার আরিফুল রীতিমতো রেগে গেলেন।বেশ কর্কশ গলায় বলল,
->তুমি যেরকম ভাবছো,আমার মেয়ের এরকম কোনো সমস্যা নেই।বরং সে,,,,।
বলতে গিয়ে আর বললো না।হৃদয় তখন বলল,
->কি হলো কিছু একটা বলতে গিয়ে বললেন না যে?
আরিফুল বেশ ঠান্ডা গলায় বলল,
->তুমি যদি আমার প্রস্তাবে রাজি হও তবেই বলবো।তার আগে নয়।আর এখন আমার প্রস্তাবে রাজি না হওয়া ছাড়া তোমার হাতে আর কোনো উপায়ও নেই।তাই কি করবে ভেবে নাও।আজকের দিন তোমায় সময় দিয়ে গেলাম।
এটুকু বলে আরিফুল হৃদয়ের সামনে থেকে চলে গেলো।হৃদয় আরিফুলের কথা চিন্তা করছে।এত বড়লোক একজন মানুষ তার মতো একজন ছেলের কেনই বা এলো নিজের মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য?তবে কি উনার মেয়ের শারীরিক কোনো সমস্যা আছে নাকি অন্য কোনো সমস্যা বুঝতে পারছে না।
ঠিক এমন সময় পাপ্পু নামের একজন লোক হৃদয়ের কাছে এলো।উনার হাতে কিছু কাগজপত্র।পাপ্পু হৃদয়ের কাছে এসে বলল,
->দেখো বাবা তোমায় একটা কথা বলার ছিলো?
->হ্যাঁ চাচা বলুন?
->আজ থেকে মাস ছয়েক আগে তোমার বাবা আমার কাছে এই বাড়িটি বিক্রি করেছিলো।তিনি জানিয়েছিলো যতদিন আমি বেঁচে থাকি ততদিন যেন এই কথা তোমায় না জানায়।আর এতদিন তিনি এই বাড়িতে ভাড়া হিসেবে থাকবেন।তিনি আমার বন্ধু মানুষ ছিলো তাই না করতে পারিনি।আমি জানি এসব হয়তো তোমার বিশ্বাস হবেনা তাই কাগজপত্র সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি।
পাপ্পু ওর হাতের কাগজপত্রগুলো হৃদয়ের হাতে দিলো।সবকিছু দেখার পর হৃদয়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।সে কি বলবে বুঝতে পারছে না।তখন পাপ্পু বলল,
->তুমি যদি চাও এই বাড়িতে ভাড়া হিসেবে থাকতে পারো।তুমি অনেক ভালো ছেলে তোমায় বাসায় রাখতে অসুবিধে নেই।
হৃদয় একদম নির্বাক।তার অগোচরে কতকিছু হয়ে গেছে অথচ সে কিছুই টের পায়নি।হৃদয় পাপ্পুকে বলল,
->চাচা আমি আপনার সাথে পরে কথা বলবো।আমায় একটু একা থাকতে দিন।
হৃদয় উঠে ঘরের মধ্যে চলে গেলো।হৃদয়ের কথা ভেবে পাপ্পুর বেশ খারাপ লাগলো।
হৃদয় ঘরের মধ্যে চুপ করে বসে আছে।হৃদয়ের বয়স যখন ১৩ বছর তখন ওর মা মারা যায়।তখন থেকে হৃদয়ের জীবনটা একদম ছন্নছাড়া হয়ে গেছে।হৃদয়ের বাবা হৃদয়কে খুব ভালোবাসতো।যখন যা প্রয়োজন হতো তখন বলা মাত্রই তা পূরন করতো।ইন্টার পর্যন্ত হৃদয়ের বাবা ওর পড়ার খরচ চালাতো।কিন্তু অনার্সে উঠার পর থেকে টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালিয়েছে।আর এখনো তাই করছে,পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করছে।হৃদয় কখনো ওর বাবার সাথে বসে খোলামেলা ভাবে কোনো কথা বলেনি।সবসময় নিজের মতো থেকেছে।একা থাকাকেই ভালো মনে করেছে সে।আজ হৃদয় ওর ভুল বুঝতে পারছে।যদি সে বাবার সাথে খোলামেলা ভাবে কথা বলতো,ব্যবসার দিকে একটু নজর দিতো তাহলে হয়তো আজ এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।কিন্তু যা হবার তা তো হয়ে যায়।ভেবেছিলো নিজেদের শেষ সম্বল এই ভিটে বাড়িটা বিক্রি করে সমস্ত পাওনাদারদের টাকা মিটিয়ে দিবে কিন্তু এখন এই শেষ সম্বলটুকুও শেষ হয়ে গেছে।
এখন হৃদয়ের কি করা উচিত সে নিজেও বুঝতে পারছে না।এখন এক মাত্র শেষ উপায় হলো আরিফুলের প্রস্তাব মেনে নেওয়া।তাছাড়া এই মুহুর্তে এতগুলো টাকা পরিশোধ করা সম্ভব না।
হৃদয় মনে মনে ভাবছে,”উনার মেয়ের মধ্যে যে সমস্যায় থাকুক না কেন তা আমার মেনে নিতে হবে।কারন এটায় একমাত্র উপায়।নিজের জীবন নষ্ট হোক আর যাইহোক ওর বাবা’কে সে ঋণের মধ্যে রাখবে না।ছেলে হিসেবে এটুকু করা তো ওর কর্তব্য”।
হৃদয় সিদ্ধান্ত নিলো,সে আরিফুলের প্রস্তাব মেনে নিবে।কিন্তু আরিফুল আবার ওকে মিথ্যা আশ্বাস দিলো না তো?না না তা কেন করবে?এসব ভাবতে ভাবতে হৃদয় ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন সকালে উঠে হৃদয় রুম থেকে বের হতেই দেখলো আরিফুল হৃদয়ের বাড়ির সামনে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।হৃদয় আরিফুলের কাছে এগিয়ে গেলো।জিজ্ঞেস করলো,
->এত সকাল সকাল আপনি?
->হুম আমার জরুরি একটা মিটিং আছে বিকেলে তাই এখনি চলে এলাম তোমার সিদ্ধান্ত জানার জন্য।তো কি সিদ্ধান্ত নিলে?
হৃদয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
->আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি।
হৃদয়ের কথায় আরিফুলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।তিনি হৃদয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল,
->আমি জানতাম তুমি রাজি হবে।এখন চলো আমার সাথে?
->কোথায়?
->আগে গাড়িতে তো উঠো তারপর না হয় বলবো।
হৃদয় কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে পড়লো।আরিফুল নিজে গাড়ি ড্রাইভ করছে।হৃদয় কোনো কথা বলছে না।মনে মনে ভাবছে,”আজ সে সামান্য টাকা কাছে বিক্রি হয়ে গেলো”।
গাড়িতে থাকাকালীন হৃদয় একটা কথাও বললো না।এমনকি আরিফুলও কিছু বললো না।
প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর আরিফুলের গাড়ি একটা বাংলো বাড়ির সামনে এসে থামলো।একটু বাদেই বাড়ির দরজা দারোয়ান খুলে দিলো।আরিফুল গাড়ি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।হৃদয় বুঝলো এটায় আরিফুলে বাড়ি।গাড়ি এক জায়গায় পার্কিং করে আরিফুল বলল,
->এসো হৃদয় গাড়ি থেকে নামো।
হৃদয় গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে তাকালো।দুতলা বিশিষ্ট সাদা রংয়ের বাড়ি।ছাদের এক পাশে টিনের ছাউনির মতো লাল রংয়ের ঢালাই করা।বাড়ির মেইন গেট থেকে বাড়ি পর্যন্ত ঢালাই করা রাস্তা।রাস্তার ধার ইট দিয়ে ডিজাইন করা।রাস্তা ধারে বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ।বাড়ির এক পাশে একটি দোলনা বসানো।
আরিফুল হৃদয়’কে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।বাড়ির ভিতর ঢুকতেই সামনে পড়লো বিশাল এক ডাইনিং রুম।কাঁচের টেবিলের চারপাশে সোফা বসানো আছে।বাড়ির ডানদিকে সিড়ি।যা উপর তলায় উঠে গেছে।হৃদয় প্রথম বারের মতো এরকম বাড়ি সচক্ষে দেখছে।আরিফুল হৃদয়কে নিয়ে সোফায় বসলো।তারপর বলল,
->আগে আমার মেয়ের সাথে পরিচয় হও।তারপর সব কথা আমি বলবো।
হৃদয় মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ”সূচক জবাব দিলো।আরিফুল ডাক দিলো,
->মা আরিশা এদিকে একটু এসো।
মিষ্টি কন্ঠে ভেসে এলো,
->আসছি বাবা।
হৃদয় আরিশার কন্ঠ শুনে ভাবছে,যে মেয়ের কন্ঠ এতটা মিষ্টি না জানি সে দেখতে কতটা সুন্দর!
একটু বাদে সিড়ি দিয়ে কারো নামার শব্দ পেয়ে হৃদয় সেদিকে তাকালো।আরিশা খুব ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে।হৃদয় অপলক দৃষ্টিতে আরিশার দিকে তাকিয়ে আছে।হৃদয়ের দেখা সব মেয়ের মধ্যে আরিশা’কে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে।উজ্জল শ্যামলা গায়ের রং।পরণে হালকা সবুজ রংয়ের সালোয়ার কামিজ।মুখে মুচকি হাসি।হাসির কারনে গাল দুটো কেমন ফুলে আছে।ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক।ঠোঁটের নিচে কালো তিল।খোলা চুল,কোমড় ছাড়িয়ে গেছে।কিছুটা চুল বুকের বা পাশে ছড়িয়ে রেখেছে।আরিশা হৃদয়ের সামনে আসতেই,,,,

লেখক_সিহাব হোসেন স্বপ্ন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)