শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

Somoy Channel
বুধবার ● ২২ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » ভিতর_বাহির
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » ভিতর_বাহির
১৩১ বার পঠিত
বুধবার ● ২২ মে ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ভিতর_বাহির

ভিতর_বাহিরঘরের দরজার লক না লাগিয়ে সম্পূর্ণ খালি গায়ে ওড়না পেচিয়ে জামা খুলছিলাম। এমন সময় দরজা খুলে সোহান ভাইয়া ঘরে ঢুকে গেল। আমি ড্যাব ড্যাব করে সোহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি, কি করবো না করবো তার কোন কিছুই আমার মাথায় ঢুকছিল না। সোহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললেন তোর কি লজ্জা শরম কিছু নাই যা ওয়াশ রুমে যেয়ে চেঞ্জ করে আয়। আমার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না। আমি সেভাবেই জামাটা নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে অবস্থায় নিজেকে দেখছি আর লজ্জায় একা একাই হাসছি। কিছু সময় পর জামা পড়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখি সোহান ভাইয়া আমার খাটের উপর শুয়ে আছে। আমাকে বের হতে দেখেই সোহান বলতে শুরু করলো, ইকরা তুই যে আমার গল্পের বইটা নিয়ে আসলি ঐটা দে।
বইটা আমার ব্যাগ এ থাকার পরেও আমি বললাম ভাইয়া বইটা আমার বান্ধবীর কাছে কাল কোচিং থেকে নিয়ে এসে দিবো। শোনেই রেগে সোহান বললো এই আমার বই কি আমি অন্য মানুষকে দেবার জন্য কিনেছি নাকি? এখনো নতুন বই নিজে পড়তে পাড়িনি আর তুই অন্যজনকে দিয়ে এসেছিস।
আহা অন্যজন হবে কেন? আমার বান্ধবিকে দিয়ে এসেছি। তোমার কোন বন্ধু যদি চাইতো তুমি দিতে না?
না দিতাম না, আগে আমি পড়তাম তারপর অন্যকে দিতাম।
তাহলে আমাকে দিলে কেন?
বেশী পাকনা হয়ে গেছিস তাইনা ধরে কান মলে দিবো এখুনি। দাঁড়া সবাইকে বলছি তোর কথা তুই যে খালি গায়ে ছিলি সে কথা এখন যেয়ে সবাইকে বলে দিবো। বলেই সোহান হনহন করে বের হয়ে গেল। আমি ডাক দিয়ে বললাম ভাল হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছে বই আর কোন দিনও পাবে না।
সে সব কথা তার কানেই গেল না। সব কাজিনরা মিলে রাতের খাবার খেতে বসেছি। সবাই বলে উঠলো ইকরা আপু তুমি নাকি এখনো খালি গায়ে থাকো। কথাটা শোনে আমার মেজাজটা গরম হয়েয়ে গেলল। বোঝতে আর বাকি রইলো না সোহান সবাইকে বলে দিয়েছে।
আমি সোহানের দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুচকি মুচকি হাসছে, আমি খাবার রেখে উঠে গেলাম আর মনে মনে চিন্তা করতে থাকলাম সোহানকে কিভাবে শাস্তি দেয়া যায়। কিন্তু কিভাবে তাকে শাস্তি দিবো, সে যে চালাক আর আমি একটা বোকা ছোট বেলা থেকেই আমাকে সবাই বোকা বলেই ডাকে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
আমাদের পরিবার অনেক বড়, কারণ আমরা যৌথ পরিবারে থাকি সে কারণে আমাদের বাড়িটাও অনেক বড় আর দুতলা। নিচে বড় চাচা আর ছোট চাচা থাকে আর দুতলায় আমরা আর সেজ চাচারা থাকি। একদম সিরির কোনায় আমার রুম এদিক দিয়েই সবাইকে ছাদ এ যেতে হয়।
রাতের বেলা খাবার খাওয়ার পর আমাদের কাজ হলো সবাই মিলে ছাদ এ বসে গল্প করা। আর সেখানে সোহান আমাকে অপদস্থ করবে এটাই হলো তার প্লান। সব সময় এটা করে থাকে। আমি কখনোই কোন প্রতিবাদ করতে পারিনা। হয়তো কখনো সবার সাথে আমিও বোকার মত হাসি, আবার কখনো কখনো আমি কান্না করতে করতে চলে আসি আর সবাই হাসে।
আমার সব কাজিনরাই সোহানের ভক্ত সোহান যা বলে তাতেই সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ বলে সোহানের সাথে তাল মিলায়। আমি সব সময় চিন্তা করি যে আমি যাবো না ছাদ এ ওদের সাথে আড্ডা দিবো না। কারণ যাবার পরেই সোহান আমাকে নানান রকম কথা বলে কাঁদাবে বা কাঁদানোর চেষ্টা করবে।
কিন্তু সোহান এসে যখন ডাক দেয় তখন আমি না যেয়ে থাকতে পাড়ি না। আবার আমাকে এতো কিছু বলে তার কোন প্রতিবাদও আমি করতে পারিনা। কি যেন এক মায়ায় পড়ে যাই আমি বার বার। ওর কথায় যেন আমার কোন সময়ই খারাপ লাগে না।
আমি জানি না কেন তার কথার কোন প্রতিবাদ আমি করতে পাড়ি না। আর কেনই বা উনি আমাকে এতো জ্বালাতন করেন। হয়তো সোহান মজার জন্য করে, কিন্তু আমার কখনোই তা নিয়ে কোন অভিযোগ থাকে না। ভাবতে ভাবতেই দরজায় টোকা পড়লো আমি দরজা খুলতেই দেখি সোহান খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কোন কথা না বলেই রুমে ঢুকে এসে টেবিলে খাবার রেখে বলতে শুরু করলো তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে ছাদ এ চলে আয়। আমি অভিমানের সুরে বললাম খাবো না তুমিই বেশী করে খাও।
তোকে আমাকে খেতে বলতে হবে না বোকা কোথাকার আমারটা আমি খেয়েই এসেছি নে এবার তাড়াতাড়ি খা নয়তো জোড় করে খাওয়াবো।
আমি কোন কথা বলছি না চুপ করে খাটের এক কোনায় বসে আছি দেখে সোহান আবার বলতে শুরু করলো কি হলো তোকে কি বললাম খাবি কিনা সেটা বল।
আমি বললামতো খাবো না,
সোহান টেবিল থেকে খাবারেরর প্লেটটা নিয়ে এসে হা কর বলছি, আমি মুখ বন্ধ করে রেখেছি হা করবো না বলে। সোহান প্লেটটা রেখে আমার মুখটা ধরে জোড় করিয়ে হা করালো তারপর খাবার খায়িয়ে দিতে শুরু করলো।
খাওয়াতে খাওয়াতে বলতে শুরু করলো এতো বড় মেয়েকে মুখে তুলে খাওয়াচ্ছি সবাই দেখলে কি বলবে? বলেই হাসতে হাসতে খাটে গড়াগড়ি খাবে এমন মনে হচ্ছে। আর আমি মুগ্ধ হয়ে সোহানের হাসি দেখছি।
সোহান বলতে শুরু করলো আচ্ছা তোর কি কোন দিনও বুদ্ধি হবে না।
আমার কি বুদ্ধি নাই নাকি? বুন্ধি না থাকলে আমি কি করে ইন্টারে উঠলাম আর একমাস ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষাও দিবো।
সোহান হাসতে হাসতে বললে শুরু করলো যে টিচাররা তোর খাতা দেখে তারা দয়া করে তোকে পাশ করিয়ে দেয়। আমি হলে তোকে প্রতিবার জিরো দিতাম।
আমি বললাম হয়েছে আমি অনেক ভাল ছাত্রী, এ জন্যই বরাবর ভাল রেজাল্ট করি হ্যাঁ তোমার মত ওতো ভাল না করতে পারলেও ভালই করি।
হুম তুই যে কত ভাল করিস তা সবাই জানে কোন রকমে টেনে টুনে পাস করিস এই হলো তোর ভাল কাল থেকে তুই আমার কাছে পড়বি।
মোটেও না তোমার কাছে পড়বো আর তুমি সবাইকে বলবে আমি পড়া পাড়ি না সেই সব বলে বেড়াবে, তা হতে দিবো না আমি।
আরে না কাউকে বলবো না বরং আমার কাছে পড়লে তুই ভাল রেজাল্ট করবি। না হলে এবার আর তোর পরীক্ষায় পাস করা হবে না।
এই তুমি কি আমাকে অভিশাপ দিচ্ছো নাকি?
আরে তোকে অভিশাপ দিয়ে কি করবো তুই যদি পড়াশোনায় আমার চেয়ে ভাল হতি তাহলে না হয় দিতাম। এরকম গাধা মেয়েকে অভিশাপ দিয়ে কোন লাভ নেই।
এই যে তুমি একটা ভুল বললে, আমি গা’ধা না গা’ধি হবে ঐ জায়গায়।
ঐ হলো একি কথা,
না মোটেও একি কথা নয় বোঝলে। আর তোমাকে একটা কথা বলি আমাকে তুই তুই করে বলবে না
আমি এখন বড় হয়েছি। তাহলে তোমার খবর আছে।
তুই বড় হয়েছিস কই আমিতো তোকে এখনো পিচ্চিই দেখতাছি। আমার সমান লম্বা হয়ে দেখা তাহলে ভাববো তুই বড় হয়েছিস।
আমার লম্বা হতে হবে না, তোমার মত তাল গাছ হবার আমার কোন সখ নাই। তার চেয়ে যেমন আছি তেমনি ভাল আছি। আর তুমি আমাকে তুই করে কেন বলো?
তাহলে কি আপনি করে বলবো তোকে তুই আমার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট এই জন্যই তোকে বোকা বলি।
হ্যাঁ পাঁচ বছরের ছোট তার জন্য তুই বলবা এখন থেকে তুমি করে বলবা।
ওরে কি সখ মেয়ের তুই কি আমার গার্লফ্রেন্ড যে তুমি করে বলবো?
ধরে নাও তাই আজ থেকে আমি তোমার গার্লফ্রেন্ডই বোঝলে।
আমার কথা শোনে সোহান বোকার মত আমার দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর আবার বলতে শুরু করলো আয়নায় নিজের মুখটা ভাল করে দেখে আয়তো একবার, আমার গার্লফ্রেন্ড হতে এসেছে মেয়ে যা ফ্রেশ হয়ে আয় ছাদ এ যাবো।
সোহানের কথা শোনে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল, রেগে বললাম আমি রোজ রোজ আয়নায় নিজের চেহারা দেখি। আর আমি যদি তোমার চেয়ে স্মার্ট বয় ফ্রেন্ড নিয়ে না ঘুরতে পারছি তবে আমার নাম ইকরা না চেঞ্জ করে নতুন করে রেখে দিও।
সোহানের মুখটা কালো হয়ে গেল। সেও রেগে বলতে শুরু করলো সেই সুযোগ তোকে দিবো না চাচাকে বলে পরীক্ষার পরই তোর বিয়ের ব্যবস্থা করাবো।
আমি তোমার কথায় হবে নাকি? আমি আরও পড়াশোনা করবো।
আমার কথায় হবে আমি বাড়ির বড় ছেলে।
আমিও বাড়ির বড় মেয়ে দুজনে তর্কে জড়িয়ে পড়লাম। তর্ক করতে করতে এক সময় সোহান আমাকে থাপ্পর মেরে দিলো। আমি গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। এই প্রথম কেউ আমাকে মারলো।
সোহান নিজেও বোকা হয়ে গেল, সোহান আমার হাত ধরে ইকরা সরিরে কান্না করিস না কেউ দেখলে আমার উপর রাগ করবে। আচ্ছা তুই যতটুকু পড়তে চাস পড়াবো।
কথা বলতে বলতেই অন্য কাজিনরা ঘরে ঢুকে গেল, আমি দ্রুত ওয়াশ রুমে চলে গেলাম, যেয়ে তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধোয়ে বের হয়ে এলাম। সবাই বলতে শুরু করলো কি হলো ভাইয়া আপু তোমরা আসছো না কেন?
এইতো এখুনি যেতাম খাবারটা শেষ করলাম চল চল তাড়াতাড়ি চল আজ সোহান ভাইয়া সবাইকে গান শোনাবে বলতেই সবাই আনন্দে হুররে বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
সোহান আমার দিকে চেয়ে আছে, আমি সোহানের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি ছাদ এর দিকে। আজ সোহান পুতুলের মত আমার সাথে হেঁটে যাচ্ছে দুজন সিরি বেয়ে ছাদ এ উঠছি।



বিষয়: #  #


আর্কাইভ